টিপস এন্ড ট্রিক্স

ভারতীয় ভিসার টুকিটাকি

July 26, 2022
ভারতীয় ভিসার টুকিটাকি

কর্ম ব্যস্ত জীবনে প্রত্যহিক কাজ করতে করতে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি এই ক্লান্তি দূর করার জন্য ভ্রমণ প্রয়োজন।

মানুষ আদিকাল থেকেই অজানাকে জানতে অদেখাকে দেখতে আগ্রহী।আর বিদেশ ভ্রমনের আকর্ষন অন্যরকম।আর কম খরচে বিদেশ ভ্রমনের সুযোগ পেলে তো আর কথাই নেই। কিন্তু বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রথমেই যে জিনিষের প্রয়োজন তাহলো পাসপোর্ট ( এখন কিন্তু ঘরে বসে পাসপোর্টের আবেদন করা যায়) এবং ঐ দেশের ভিসা।

কম খরচে বিদেশ ভ্রমণের জন্য ভারতই বাংলাদেশের মানুষের পছন্দের শীর্ষে আছে। প্রতিবছর ১০ লাখের বেশি বাংলাদেশি পর্যটক ভারতে বেড়াতে, চিকিৎসা করতে, কেনাকাটা করতে  বা ব্যবসায়িক কাজে যায়।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অনেকগুলো স্থল বন্দর রয়েছে। এছাড়া বিমানপথেও কলকাতা, দিল্লী, চেন্নাই ও মুম্বাইয়ের সাথে সরাসরি ফ্লাইট আছে তাই যাতায়াত সহজ।

ভারত ভ্রমণ করতে হলে আপনাকে প্রথমেই ভারতীয় হাই কমিশন থেকে ভারতীয় ভিসা নিতে হবে।তাহলে চলুন জেনে নেই ভারতীয় ভিসার টুকিটাকি।

ভারতীয় ভিসা সংগ্রহের জন্য আপনাকে ভারতীয় ভিসা আবেদন কেন্দ্রে (আইভিএসি) ওয়েব সাইটে যেথে হবে।তারপর ONLINE APPLICATION FORM বাটনে ক্লিক করে দেশ,মিশন,জাতিয়তা,জন্ম তারিখ,ইমেইল আইডি এবং ভিসা টাইপ সিলেক্ট করে সাবমিট করলে আপনাকে একটি Temporary Application ID দিবে যা নোট পেডে লিখে রাখা প্রয়োজন যাহাতে পরবর্তিতে কোন প্রয়োজনে কাজে লাগানো যায়।

ভিসা ফর্ম

তারপর আবেদনপত্রের সব তথ্য সঠিকভাবে পুরন করতে হবে যেমন নিজের নাম,বাবার নাম,মাতার নাম ঠিকানা, পাসপোর্ট নং, এক্সপায়ার ডেট, NID নং  সহ ফরমের যাহা আছে সব খুব সতর্কতার সাথে দিতে হবে যাহাতে ভুল না হয়।

ফরমের একটি গুরুত্বপুর্ণ ফিল্ড হলো PORT OF ARRIVAL এবং PORT OF EXIT.

তাহলে দেখে নিন আপনি ভারতের কোথায় যেতে চাইলে কোন পোর্ট দিয়ে ভিসা করবেন??

১. সিক্কিম/দার্জিলিং/শিলিগুড়ি/ডুয়ার্স/সান্দাকফু/গোচেলা ট্রেক ইত্যাদি যেতে চাইলেঃ

চ্যাংড়াবান্ধা অথবা ফুলবাড়ি দিতে হবে। ফুলবাড়ি দিলে আপনি খুব সহজেই শিলিগুড়ি পৌঁছে যাবেন। তবে এই পোর্টে সুযোগ সুবিধা কম থাকায় বেশির ভাগ ট্যুরিস্ট চ্যাংড়াবান্ধা দিয়ে প্রবেশ করে। চ্যাংড়াবান্ধা দিয়ে প্রবেশ করলে আপনাকে ২ ঘণ্টার মত জার্নি করে শিলিগুড়ি যেতে হবে।

২. মেঘালয়/নাগাল্যান্ড/অরুণাচল প্রদেশ যেতে চাইলেঃ

আপনাকে ডাউকি পোর্ট দিয়ে ভিসা করতে হবে। যা আমাদের সিলেটের তামাবিল দিয়ে প্রবেশ করতে হয়।

৩. ত্রিপুরা যেতে চাইলেঃ

আপনাকে আগরতলা পোর্ট দিয়ে ভিসা করতে হবে।

আগের নিয়মে উপরের যে কোন পোর্ট নিলে এডিশোনাল পোর্ট হিসেবে (বেনাপোল+গেদে+ট্রেন+এয়ার) পাওয়া যায় বিধায় আলাদা করে শুধু বেনাপোল পোর্ট নেওয়া লস।

বিঃদ্রঃ এছাড়া আপনি ভিসা করার পর মাত্র ৩০০ টাকা দিয়ে আরও ২টি পোর্ট সংযুক্ত করতে পারবেন ৭ দিন সময় এর মধ্যে।

আপনি যদি পুর্বে ভারত ভ্রমণ করে থাকেন তাহলে তার তথ্য সঠিক ভাবে দিতে হবে।

বর্তমানে আপনি ভারতের কোথায় ভ্রমন করতে চাচ্ছেন, কোন হোটেলে থাকবেন ইত্যাদি সঠিকভাবে পুরণ করতে হবে।

ফরমটি যতাযতভাবে পুরণ করে বিকাশ,নগদ বা ইউপে এর মাধ্যমে ভিসা ফি ৮০০.০০টাকা প্রদান করে প্রয়োজনিয় কাগজগুলো নিয়ে নকটস্থ ভিসা সেন্টারে সকাল ৯.০০- ১২.০০ ঘটিকার মধ্যে জমা দিতে হবে।

ভারতীয় ট্যুরিস্ট ভিসা করতে প্রয়োজনীয় কাগজগুলো হচ্ছেঃ

১। ২x২ ল্যাব প্রিন্ট ছবি (ব্যাকগ্রাউন্ড সাদা)

২। এপ্লিকেশন ফর্ম

৩। এন আই ডি / স্মার্ট কার্ড / জন্ম নিবন্ধন কপি

৪। বর্তমান ঠিকানা অনুযায়ী আপডেট ইউটিলিটি বিলের কপি।

৫। লাস্ট ৬ মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট (মিনিমাম ব্যালেন্স ২০০০০৳) / 150 ডলার এনডোর্সমেন্ট।

৬। পেশাগত প্রমাণপত্র (NOC/ট্রেড লাইসেন্স /শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি ইত্যাদি)

৭। লাস্ট ভিসা কপি (যদি থাকে)।

৮। পাসপোর্ট কপি

৯। নতুন এবং পুরাতন পাসপোর্ট (একসাথে পিনাপ করে দিবেন)

ভারতীয় মেডিকেল ভিসা পেতে যে সমস্ত ডকুমেন্টস প্রয়োজন

১। পাসপোর্ট । ( নুন্যতম মেয়াদ ৬ মাস থাকতে হবে )

২। ছবি ১ কপি ২/২সাইজ ও ছবির সফটকপি।

৩। বিদ্যুৎ / পানি / টেলিফোন বিলের কপি ( বর্তমান ঠিকানার )।

৪| NID এর কপি ।

৫। নিজ পেশা ডিটেইলস / পিতা অথবা স্বামীর / অবসরের কাগজ।

৬। Last 3 months Bank statement এর কপি / ডলার এন্ড্রোসমেন্ট ।

৭। লাস্ট ইন্ডিয়ান এবং অন্যান্য দেশের ভিসা কপি ( যদি থাকে )

৮। বাংলাদেশের ডাক্তারের বিগত রিপোর্ট এবং প্রেসক্রিপশন।

৯। ইন্ডিয়ান ডাঃ এর এপয়েন্টমেন্ট।

বিজনেস ভিসার আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিঃ

০১। পাসপোর্ট (সবগুলো)

০২। 2×2 ছবি

০৩। জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম নিবন্ধন/ স্মার্ট কার্ড

০৪। ইউটিলিটি বিলের কপি

০৫। ব্যক্তিগত ব্যাংক স্টেটমেন্ট

০৬। কোম্পানির ব্যাংক স্টেটমেন্ট

০৭। ভিসার আমন্ত্রণ পত্র

০৮। কোম্পানির প্যাডে ভিসার অনুরোধ পত্র

০৯। মাসিক বেতনের সনদপত্র

১০। নবায়নকৃত ট্রেড লাইসেন্স

১১। নবায়নকৃত আয়কর পত্র

১২। ভ্যাট এর সনদপত্র

১৩। নবায়নকৃত আমদানি ও রপ্তানি সনদপত্র

১৪। কোম্পানির সংঘ স্মারক (মেমোরেন্ডম)

১৫। এল সি (L/C – এল সি স্টেটমেন্ট, এল সি কপি, বিল অফ এন্ট্রি, চালান ফরম)

১৬। পাসপোর্টের ফটোকপি (পাতা ২,৩)

ট্রানজিট ভিসার আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিঃ

০১। পাসপোর্ট (সবগুলো)

০২। 2×2 ছবি

০৩। জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম নিবন্ধন/ স্মার্ট কার্ড

০৪। ইউটিলিটি বিলের কপি

০৫। ব্যাংক স্টেটমেন্ট/ ডলার এনডোর্সমেন্ট

০৬। পেশাগত প্রমানপত্র

০৭। বাসের টিকেটের কপি

০৮। হোটেল বুকিং

০৯। পাসপোর্টের ফটোকপি (পাতা ২,৩)

পোর্টঃ

ভূটান – চ্যাংড়াবান্ধা/ জয়গা

নেপাল – চ্যাংড়াবান্ধা/ রানীগঞ্জ

(নেপালের ভিসা বাধ্যতামূলক)

এন্ট্রি ভিসার আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদিঃ

০১। পাসপোর্ট (সবগুলো)

০২। 2×2 ছবি

০৩। জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম নিবন্ধন/ স্মার্ট কার্ড

০৪। ইউটিলিটি বিলের কপি

০৫। ব্যাংক স্টেটমেন্ট/ ডলার এনডোর্সমেন্ট

০৬। পেশাগত প্রমানপত্র

০৭। পাসপোর্টের ফটোকপি (B)

০৮। ভিসার ফটোকপি (B)/ প্রাসঙ্গিক / সম্পর্কিত সকল কাগজ

০৯। পাসপোর্টের ফটোকপি (পাতা ২,৩)

মনেরাখবেন সব কাগজগুলো যেন A4 সাইজের হয়।

এবং কাগজ গুলো উপরের সিরিয়াল অনুযায়ী সাজিয়ে দিবেন।

ভিসা আবেদন পত্র জমা দেয়ার পূর্ব শর্ত সমূহ

ভিসা প্রত্যাখ্যান বা বিলম্ব এড়ানোর জন্য আবেদনপত্র জমা দেয়ার আগে অনুগ্রহ করে নিম্নলিখিত নিয়মাবলী অনুসরণ করুন ।

•        পাসপোর্টের বৈধতা ছয় মাসের বেশি হতে হবে।

•        পাসপোর্টে ন্যূনতম তিনটি খালি পৃষ্ঠা অবশিষ্ট থাকতে হবে।

•        আবেদনপত্রে পাসপোর্ট নম্বর সঠিকভাবে উল্লেখ করা থাকতে হবে।

•        মেয়াদ শেষ হওয়ার তারিখ এবং পাসপোর্ট ইস্যুর তারিখ সঠিকভাবে উল্লেখ করা থাকতে হবে।

•        আবেদনপত্রে নামটি সঠিক ভাবে উল্লেখ করতে হবে ।

•        আবেদনপত্রে অবশ্যই স্ক্যান করা ছবি থাকতে হবে।

•        পূর্ববর্তী পাসপোর্ট যদি থাকে তাহলে মূল পাসপোর্ট এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে। যদি হারিয়ে যায় সেক্ষেএে জিডি কপি সংযুক্ত করতে হবে।

•        পূর্ববর্তী ভিসা ইস্যু করার বিবরণ খালি রাখা যাবে না ।

•        ভারত ও বাংলাদেশে এর রেফারেন্স খালি রাখা যাবে না ।

•        বর্তমান / স্থায়ী ঠিকানা ইউটিলিটি বিলের সাথে মিল থাকতে হবে ।

•        পেশার বিবরণ সঠিকভাবে পূরণ করতে হবে ।

•        জন্মের তারিখ জাতীয় পরিচয় পত্র / জন্ম সনদপত্রের সঙ্গে মিল থাকতে হবে

•        আবেদনপত্র পূরণ করার ৮ দিনের মধ্যে আবেদনপত্র ভিসা আবেদন কেন্দ্রে জমা দিতে হবে।

•        ঢাকা, ময়মনসিংহ, বরিশাল, খুলনা, যশোর, সিলেট, সাতক্ষীরার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আবেদনকারীরা অনলাইন ফর্ম এ ঢাকা মিশন নির্বাচন করবে।

•        চট্টগ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালি পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আবেদনকারীরা অনলাইন ফর্ম এ চট্টগ্রাম মিশন নির্বাচন করবে।

•        রাজশাহী, রংপুর, ঠাকুরগাঁ, বগুড়ার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আবেদনকারীরা অনলাইন ফর্ম এ রাজশাহী মিশন নির্বাচন করবে।

•        সিলেট পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আবেদনকারীরা অনলাইন ফর্ম এ সিলেট মিশন নির্বাচন করবে।

•        আপনার ভিসা আবেদন জমাদানকারী সেন্টার এবং টাকা জমাদানকারী সেন্টার এর নাম অবশ্যই এক হতে হবে।

আপনার ভিসার আবেদন প্রত্যাখ্যান হতে পারে যদি আপনি

•        জীবনের জন্য হুমকীসরূপ কোন রোগে ভোগেন।

•        মানসিক রোগে ভোগেন এবং চিকিৎসা ব্যতীত অন্য কোন উদ্দেশ্যে ভারতে ভ্রমণ করেন।

•        নিজে মাদকাসক্ত বা মাদক পাচার করেন।

•        অপরাধী বা কোন দেশে কোন অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে থাকেন।

•        কোন দেশ হতে দ্বীপান্তুরিত বা বহিষ্কৃত হয়ে থাকেন।

•        অপর্যাপ্ত/ অসম্পূর্ণ/ মিথ্যা কাগজপত্র দিয়ে থাকেন।

•        অবৈধ ভ্রমণ নথির অধিকারী হয়ে থাকেন।

•        প্রাসঙ্গিক কোন তথ্য গোপন করে থাকেন।

•        অথবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মতে এমন কোন ভিত্তিতে, যা আবেদনকারীকে ভিসার জন্য অযোগ্য হিসাবে পেশ করবে, যার কারণ আবেদনকারীর কাছে মৌখিকভাবে বা লিখিতভাবে লিপিবদ্ধ করে জানানো হবে, এমন কোন কথা নেই।

উপরের বিষয়গুলো খেয়াল করে ভিসার আবেন করলে ভিসা পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক।আপনার ভ্রমণ নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হোক এ কামনা রইলো।

You Might Also Like

2 Comments

  • Reply মনজুর September 20, 2022 at 10:26 am

    অনেক উপকারী,ধন্যবাদ স্যার

  • Leave a Reply